মুজিব বর্ষ রচনা ৫ম ৬ষ্ট ৭ম ৮ম ৯ম ও ১০ম শ্রেণির জন্য

 মুজিব বর্ষ সম্পর্কে এটি একটি সুন্দর অনুচ্ছেদ রচনা। এটি একটি খুব সংক্ষিপ্ত এবং সহজ অনুচ্ছেদ রচনা। আমি মনে করি আপনি এটা পছন্দ করবেন। এই অনুচ্ছেদ মাত্র কিছু শব্দের। সমস্ত শ্রেণীর ছাত্র ও ছাত্রীরা এটি পড়তে এবং মনে রাখতে পারবে।

 মুজিব বর্ষ রচনা সকল শ্রেণির জন্য


ভূমিকা


২০২০ সালের ১৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের শতায়ু হয়।আবার কাকতালীয়ভাবে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে বাংলাদেশ তাঁর স্বাধীনতার অর্ধ-শত বার্ষিকীতে পদার্পণ করবে।কি আশ্চর্য এক মিলের সেতু বন্ধন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর তাঁর স্বপ্নের গড়ে ওঠা বাংলাদেশের। কিন্তু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ এই বাঙালিকে জাতি হিসেবে আমরা মাত্র ৫৫ বছর ৪ মাস বাঁচতে দিয়েছি। যদি তিনি তাঁর অতি প্রিয় বাংলার মাটিতে শতবর্ষ বেঁচে থাকতেন তবে এই দিনটি জাতি তখন কীভাবে পালন করত, তা ভাবলে মনেপ্রাণে শিহরণ জাগে।

মুজিব বর্ষ কী

 হল বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালনের জন্য ঘােষিত বর্ষ। বাংলাদেশ সরকার ২০২০-২১ সালকে মুজিব বর্ষ হিসেবে পালনের ঘােষণা দিয়েছে। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত এ বর্ষ উদ্যাপন করা হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধুর জীবন বৃত্তান্ত:বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গােপালগঞ্জ জেলার পাটগাতি ইউনিয়নের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান। তারা পিতা ছিলেন গােপালগঞ্জ দায়রা আদালতের হিসাব রক্ষক। তার মাতার নাম ছিল সায়েরা খাতুন। তারা ছিলেন মােট চার বােন এবং দুই ভাই। শেখ মুজিব ছিল সন্তানদের মধ্যে তৃতীয়। তিনি গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন ১৯২৭ সালে।পরবর্তীতে গােপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯২৯ সাল থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত এখানে পড়ালেখা করেন তিনি। চোখের জটিল সমস্যার কারনে তিনি ১৯৩৪ সাল থেকে পরবর্তী চার বছর পড়াশােনা করতে পারে নাই।কারন এ সময়ে তার চোখের সার্জারী করাতে হয়। এবং সুস্থতা লাভ করতে সময় লাগে।পরবর্তীতে তিনি গােপালগঞ্জের মিশনারী স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। তার নেতৃত্ব প্রদানের সূত্রপাত ঘটে এই গােপালগঞ্জ মিশনারী স্কুলের থেকেই। ভারত পাকিস্তান বিভাজনের পরে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাবে ভর্তি হন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন কালেই তিনি গঠন করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লীগ। এটি প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি। এর মাধ্যমেই তিনি একজন অসমান্য ছাত্র নেতায় পরিনত হয় এবং যার পরবর্তী ফল স্বরূপ স্বাধীনতার ডাক!(মুজিব বর্ষ রচনা)


বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ


 বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শব্দ দুইটি একবারে ওতপ্রােতভাবে জড়িত। কারন বঙ্গবন্ধু

থাকলে আজকের বাংলাদেশ হয়তাে আমরা পেতাম না। বাংলাদেশ শব্দের মুলে হলাে শেখ মুজিব।


কারন তৎকালীন সময় আমাদের দেশের নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান। এবং আমাদের এই পূর্ব পাকিস্তানের শাসন ব্যবস্থা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের হাতে। তবে আমরা ছিলাম পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় সম্পদ ও জনবলে বেশি। তারপরও আমাদের ছিল না কোন স্বাধীনতা। পশ্চিম পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা ছিল উর্দু ৫২ তে পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদের রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে উর্দুকে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের কারনে তারা ব্যার্থ হয় এবং বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। আর এই রকমই বিভিন্ন পদে পদে তারা আমাদের উপর জুলুম শুরু করে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের অধিকার লুণ্ঠন এবং এদেশের সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার করা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের কাজ। আর এই শােষণ থেকে বাঙ্গালী জাতিকে মুক্ত করতেই জন্ম হয় শেখ মুজিবের।(মুজিব বর্ষ রচনা)


মুজিব বর্ষের আয়ােজন

 জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনে বছরব্যাপী মহাকর্মযজ্ঞের পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ।জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ে নানা পরিকল্পনা করেছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠান। ইতােমধ্যে ২৯৬টি পরিকল্পনার তালিকা করেছে ওই কমিটি। এর মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিবস ঘিরে বড় পরিসরের কর্মসূচির পাশাপাশি পুরাে বছরে থাকছে বিভিন্ন আয়ােজন। থাকছে আনন্দ আয়ােজন, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, প্রামাণ্যচিত্রের পরিকল্পনা, আন্তর্জাতিক প্রকাশনা, বাংলা ও ইংরেজিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জন্মশতবার্ষিকী স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ।

বছরব্যাপী আয়ােজন- ১৭ মার্চ ২০২০ 

 মুজিববর্ষের বছরব্যাপী আয়ােজনের সূচনা হয়েছে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ। এদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা শহর ও বিভিন্ন স্থানে ৩১ বার তােপধ্বনি, সব সরকারি, বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন। ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, টুঙ্গীপাড়ায় জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি দেশব্যাপী বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা আয়ােজন করা হয়েছে। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর আনুষ্ঠানিক আয়ােজন। রাষ্ট্রপতি মাে. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি সেদিনের অনুষ্ঠানে যােগ দিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা। এদিন জেলা ও উপজেলায় বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে



জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধন অনুষ্ঠান আয়ােজন করা হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন হবে।(মুজিব বর্ষ রচনা)

২২-২৩ মার্চ ২০২০: মুজিববর্ষ উপলক্ষে সংসদের বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২২ মার্চ অধিবেশনের শুরুর আগে সব সংসদ সদস্য ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিশেষ অধিবেশনে যােগ দিয়েছেন।

২৫ মার্চ ২০২০ : গণহত্যা দিবস পালন।

২৬ মার্চ ২০২০: মুজিববর্ষের আবহে স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস পালন।

১৭ এপ্রিল ২০২০ : মেহেরপুরের মুজিবনগর দিবস উদযাপন।

২৩ মে ২০২০ : জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তি দিবস উদ্যাপন।

৭ জুন ২০২০ : ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস পালন।

২৩ জুন ২০২০ : রােজ গার্ডেন বা সােহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন।

৮ আগস্ট ২০২০ : বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মদিন পালন।

১৫ আগস্ট ২০২০: জাতীয় শােক দিবস পালন।

২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০: জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণ প্রদানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিষয়ক

আলােচনা।

৩ নভেম্বর ২০২০ : ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও অন্যান্য স্থানে জেল হত্যা দিবস পালন।

১৪ ডিসেম্বর ২০২০ : রায়েরবাজার বধ্যভূমিসহ সারা দেশের সকল বধ্যভূমিতে ও অন্যান্য স্থানে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন।

১৬ ডিসেম্বর ২০২০ : সােহরাওয়ার্দী উদ্যান, জাতীয় প্যারেড স্কয়ার ও অন্যান্য সুবিধাজনক স্থানে বিজয় দিবস উদ্যাপন।


১০ জানুয়ারি ২০২১ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উদ্যাপন।

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১; শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন।

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ : সােহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু' উপাধি প্রদানের বার্ষিকী উদযাপন।

৭ মার্চ ২০২১: ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উদ্যাপনে সাত দিনব্যাপী অনুষ্ঠান আয়ােজন এবং আর্মি। স্টেডিয়ামে জয় বাংলা কনসার্টের আয়ােজন।

১৭ মার্চ ২০২১ : সােহরাওয়ার্দী উদ্যান বা জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় মুজিববর্ষের সমাপনী অনুষ্ঠান আয়ােজন; রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং টুঙ্গীপাড়ায় জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠান।মুজিব বর্ষ রচনা

বঙ্গবন্ধুর অবদান

বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে যেমন বঙ্গবন্ধুকে চিন্তা করা যায় না, তেমনি বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিলে অর্থহীন হয়ে পড়ে বাংলাদেশও। এ কথা তাে ইতিহাসের অবিসংবাদী সত্য যে, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ বােধ করি অপূর্ণ ও অধরাই থেকে যেত। আজীবন সংগ্রামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে শিক্ষা আন্দোলন, ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলন, সামরিক শাসনবিরােধী আন্দোলন, সর্বোপরি সত্তরের নির্বাচনে বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। ৭ মার্চ ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে দাঁড়িয়ে তিনি বজ্রকণ্ঠে যে ভাষণ দেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তা হয়ে আছে এক চির অম্লান মাইলফলক। বঙ্গবন্ধু ঘােষণা করেন, 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।' নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অমল ধবল স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু। তিনি এবং কেবল তিনিই তাঁর বলিষ্ঠ সুযােগ্য সুদৃঢ় অনমনীয় অকুতােভয়, সর্বোপরি দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতিকে পৌঁছে দিয়েছেন স্বাধীনতার সুবর্ণ তােরণে। এর পরের ইতিহাস সবার জানা এবং তা বিশ্ববাসীরও অজানা নয়। ভাষণটি ইতােমধ্যে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণের স্বীকৃতি পেয়েছে। কেবল একটি ভাষণ ‘ওয়ার্ল্ডস ডুকমেন্টারি হেরিটেজ' হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতির গৌরব বহির্বিশ্বে বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।(মুজিব বর্ষ রচনা)


উপসংহার

 বাংলাদেশ গঠন এবং বাঙ্গালির স্বাধীনতা অর্জনে শেখ মুজিবের ভূমিকা অনস্বীকার্য।তিনি বাঙ্গালি জাতির স্বাধীনতার মহা নায়ক। আর এ কারনেই তাকে জাতির পিতা নামে ডাকা হয়। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন আমাদের জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে উদ্যাপিত হয়। দিনটিকে সামনে রেখে শিশুদের তৈরি করার বিষয়টি আমাদের সামনে এসে যায়।বঙ্গবন্ধু যেভাবে শৈশব-কৈশােরে নানা ধরনের মানবিক চেতনাবােধে বড় হয়েছেন, আমাদের শিশুদের মাঝে এ চেতনা বিস্তার লাভ করুক- এটাই এ সময়ের প্রত্যাশা।


অনুচ্ছেদ রচনা:



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url