রয়েল বেঙ্গল টাইগার রচনা | ৫ম শ্রেণি
প্রিয় পরীক্ষার্থী, বাংলা বিষয়ের ১৫ নম্ব্বর প্রশ্ন থাকবে রচনা লেখার ওপর। প্রশ্নটি অবশ্যই হবে যোগ্যতাভিত্তিক। রচনার অপশন চারটি; এর মধ্যে যেকোনো একটির উত্তর লিখতে হবে। রচনার জন্য কিছু ইঙ্গিত বা hints দেওয়া থাকবে। তোমাদের অনুশীলনের জন্য আজ রচনার একটি নমুনা দেওয়া হল।
বাংলাদেশের জাতীয় পশু/ রয়েল বেঙ্গল টাইগার
ভূমিকা :
সুন্দরবন হল নানা প্রজাতির বন্য প্রাণীর আবাসস্থল। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত একটি বন। রয়েল বেঙ্গল টাইগার এখানকার বন্য প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে অন্যতম প্রাণী। রয়েল বেঙ্গল টাইগার হলো বাংলাদেশের জাতীয় পশু।
আকৃতি ও সৌন্দর্য :
রয়েল বেঙ্গল টাইগারের গায়ের বর্ণ হলো গাঢ় হলুদ থেকে লালচে হলুদ এবং তাতে লম্বা কালো ডোরা থাকে। এই ডোরা পেছন দিকে একটু বেশি। পেটের দিকটা সাদাটে। হলুদ রঙের লেজে অনেকগুলো কালো ডোরা কাটা দাগ আর লেজের আগা কালো। কানের পেছন দিকটা কালো রঙের, তাতে একটি স্পষ্ট সাদা দাগ। মাথাসহ বাঘের দৈর্ঘ্য ১৪০ থেকে ২৮০ সেন্টিমিটার, উচ্চতা ৯৫ থেকে ১১০ সেন্টিমিটার। এদের ওজন প্রায় ১১৫ থেকে ২৮০ কেজি।
হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) | ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা
স্বভাব :
রয়েল বেঙ্গল টাইগার সাধারণত নিঃসঙ্গ বা একাকি থাকতে পছন্দ করে। কখনো কখনো আবার জোড়া বেঁধে থাকে। এরা হলো নিশাচর প্রাণী। গরু, বুনো শূকর,মহিষ, হরিণ, সজারু ইত্যাদি শিকার করে খায়। মাঝারি এবং বড় আকারের একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার প্রতিদিন প্রায় ছয় থেকে নয় কেজি পর্যন্ত মাংস খেয়ে থাকে। এরা প্রায় নিজের দেহের দ্বিগুণ বড় জন্তুও শিকার করতে পারে।
বাসযোগ্য স্থান :
our another Blog: বউকে এস এম এস ছবি, রাগ ভাঙ্গানোর sms
রয়েল বেঙ্গল টাইগার সহজেই গরম আবহাওয়ায় খাপখাইয়ে নিতে পারে।ম্যানগ্রোভ জলাভূমি, পত্রগোচর বা উষ্ণমন্ডলীয় অরণ্য, ন—সর্বত্রই বসবাস করতে পারে। বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, নেপাল চীন ও পশ্চিম মিয়ানমার এদের আবাসভূমি। একসময় এমন সময় ছিল যে বাংলাদেশের প্রায় সব বনেই রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছিল। এখন শুধু সুন্দরবনেই এদের পাওয়া যায়।
উল্লেখযোগ্য ভূমিকা :
বাংলাদেশের সব বন্য প্রাণীর মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখা পেলে সুন্দরবনে দর্শনার্থী ও পর্যটকদের চোখ সার্থক হয়। এই প্রাণী আমাদের শক্তি ও সৌন্দর্যের প্রতীক।
হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) | ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা
ভারতীয় উপমহাদেশে যত ধরনের বাঘের দেখা মেলে, তাদের মধ্যে আকারে বৃহত্তম, ক্ষিপ্রগতিসম্পন্ন এবং হিংস্রতায় অনন্য এই রয়েল বেঙ্গল টাইগার। শুধু উপমহাদেশ নয়, সারাবিশ্বের বাঘ পরিবারের সিংহভাগ সদস্য বেঙ্গল টাইগার গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। এ বাঘের ঐতিহ্য একে উপমহাদেশীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে উল্লেখিত করেছে। তাই এটি ভারত এবং বাংলাদেশের জাতীয় পশুর সম্মাননা পেয়েছে। বৈজ্ঞানিক পরিমণ্ডলে এদের নাম হলো Panthera tigris tigris.
রয়েল বেঙ্গল টাইগারদের নিবাস বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এবং ভুটানের বনাঞ্চলে। ধারণা করা হয় যে,মায়ানমারে এবং চীনেও অল্পসংখ্যক রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বসবাস রয়েছে। বাঘশুমারি-২০১৯ এর হিসাবমতে, রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জনসংখ্যা ভারতে ২,৯৬৭, বাংলাদেশে ৪৪০, নেপালে ২৩৫ এবং ভুটানে ১০০। ঘনবর্ষণ বনাঞ্চল (রেইনফরেস্ট), অরণ্যের জলাভূমি ও লম্বা ঘাসযুক্ত তৃণভূমির দিকে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বিচরণ লক্ষ করা যায়।
বাঘের বাহ্যিক বর্ণনা
রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখতে কেমন?
এটা সবার মনেই থাকে?
প্রত্যক্ষদর্শীদের উত্তর, অসম্ভব সুন্দর। সাহিত্যের পাতার ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ কথাটির বাস্তবিক অর্থ বুঝতে হলে আপনাকে রয়েল বেঙ্গলকে অনেক কাছ থেকে দেখতে হবে। মোটা পা, মজবুত দাঁত ও চোয়াল এবং সমস্ত দেহ জুড়ে রঙের বাহারি নকশাখচিত রয়েল বেঙ্গল টাইগার একটি স্তন্যপায়ী এবং মাংসাশী প্রাণী। এদের গায়ের রঙ পেটের দিকে হলুদ থেকে হালকা কমলা রঙের হয়। পায়ের ভেতরের দিকে সাদা রঙ দেখা যায়।
গায়ের কমলা রঙের উপর লম্বালম্বি কালো, ধূসর বা বাদামি ডোরাকাটা দাগ দেখা যায়। লেজের দিকে এ দাগ গোলাকৃতির হয়ে যায়। জেনেটিক মিউটেশনের কারণে বেঙ্গল টাইগারের এক বিশেষ এবং দুর্লভ জাত হোয়াইট বেঙ্গলের দেখা মেলে, যাদের গায়ের রঙ সাদা হয়। রয়েল বেঙ্গলের চোখের রঙ হলদে হলেও হোয়াইট বেঙ্গলের রঙ হয় নীলচে।
এখানে অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, পৃথিবীর প্রতিটি বেঙ্গল টাইগারের গায়ের ডোরাকাটা দাগের ধরন একে অপরের থেকে আলাদা। অর্থাৎ, দুটো বাঘের ডোরাকাটা দাগ কখনই এক হবে না। অনেকটা মানুষের চেহারা বা আঙুলের ছাপের মতো। যদিও যমজদের ক্ষেত্রে চেহারা এক হতে পারে, তবে বাঘদের গায়ের দাগ এক হবে না। মূলত, এ বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে বাঘ গণনা করা হয়। একটি বাঘ গড়ে ১০-১৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে।
পুরুষ বাঘের ওজন গড়ে ২২৫ কেজি এবং বাঘিনীদের গড় ওজন ১৩৫ কেজি। এদের দেহের দৈর্ঘ্য প্রায় নয় ফুট। এদের দাঁত খুব শক্ত হয়। আকারে প্রায় ১০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের এই দাঁতের কামড় থেকে শিকার সহজে বের হতে পারে না।
বংশবিস্তার
একাকী থাকতে পছন্দ করা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের একমাত্র সামাজিক কর্মকাণ্ড হিসেবে ধরা যায় প্রজননক্রিয়া এবং সন্তান পরিচর্যাকে। অন্যান্য বন্যপ্রাণীর মতো এদের প্রজননের কোনো নির্দিষ্ট ঋতু নেই। একটি বাঘিনী বছরের ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যবর্তী সময়ে শাবকের জন্ম দেয়। একটি বাঘিনী একসাথে এক থেকে চারটি শাবকের জন্ম দিতে পারে। একটি পুরুষ বাঘ ৪ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয়ে ওঠে।
স্ত্রী বাঘের ক্ষেত্রে প্রজননক্ষম হওয়ার বয়স তিন বছর হয়ে থাকে। বাঘিনীর গর্ভকাল প্রায় ১০৪ দিনের মতো হয়। কিছু ক্ষেত্রে এরা ৯৮তম দিন বা এর আগে শাবক জন্ম দেয়। আবার ১১০ দিনের পরেও জন্ম দিতে দেখা গেছে।
বাঘ শাবক জন্মের পর প্রথম তিন থেকে ছ'মাস দুধপান করে জীবনধারণ করে। জন্মের ১০ দিনের মাথায় এদের চোখ ফোটে। মোট জন্ম নেওয়া শাবকের মধ্যে ৫০ শতাংশ বিভিন্ন কারণে মারা যায়। বেঁচে থাকা পাঁচমাস বয়সী শাবককে মা বাঘ শিকারজীবনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। মোটামুটি দু' বছর বয়সী বাঘ নিজের শিকার নিজে করতে শিখে যায় এবং একাকী জীবনযাপন শুরু করে।
উপসংহার :
বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়ায়, খাবারের অভাব থাকায়, অবৈধ শিকার ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বর্তমানে এই জাতীয় পশু বিপন্নপ্রায় হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ সরকার দেওয়া বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন ও বিধিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রাণী সংরক্ষণের প্রতি জনগণের সচেষ্ট হওয়া খুবই প্রয়োজন। অবৈধ শিকার বন্ধ করে ও প্রাকৃতিক পরিবেশকে সংরক্ষণ করে আমাদের এই জাতীয় পশুসহ সব বন্য প্রাণীকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।