রাম ছাগল পালনের সহজ পদ্ধতি | রাম ছাগল এর সকল বিষয় **

রাম ছাগল হলো একধরনের বিদেশি জাতের ছাগল। এধরনের ছাগলকে যমুনাপাড়ি ছাগলও বলা হয়।রাম ছাগলকে কেই আমরা যমুনাপাড়ি ছাগল বলে ডেকে থাকি। রাম ছাগল গঙ্গা ও চম্বল নদীর মধ্যবর্তী এটোয়া জেলা, ভারতের উত্তর প্রদেশের যমুনা এবং আগ্রা ও মথুরা জেলায় প্রচুর দেখতে পাওয়া যায়।বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকাতেও রাম ছাগল দেখতে পাওয়া যায়।মাংস ও দুধ উভয়ের জন্য  রাম ছাগল পালন করা হয়।


 বাংলাদেশে প্রজনন কাজে অন্যান্য দেশী জাতের সাথে এদের সাধারনত মিলন করানো হয়।


রাম ছাগল পালনের সহজ পদ্ধতি(পালন পদ্ধতি)


রাম ছাগল প্রজনন  পালন:পরিষ্কার,দুর্গন্ধমুক্ত,উষ্ণ,শুষ্ক,পর্যাপ্ত আলো ও বায়ূ চলাচলকারী পরিবেশ পছন্দ করে। স্যাঁত স্যাঁতে, গোবরযুক্ত, বদ্ধ, অন্ধকার ও পুতিগন্ধময় পরিবেশে ছাগলের রোগবালাই যেমন: একথাইমা,নিউমোনিয়া,চর্মরোগ, ডায়রিয়া ইত্যাদি বিভিন্ন জাতীয় সংক্রামক ও পরজীবীয় রোগ হতে পারে। সেই সাথে ওজন বৃদ্ধির হার, দুধের পরিমাণ এবং প্রজনন দক্ষতা কমে যায়। ঘর নির্মাণের স্থানঃ পূর্ব পশ্চিমে লম্বালম্বী, দক্ষিণ দিক খোলাস্থানে ঘর নির্মাণ করা উচিৎ। খামারের তিন দিকে ঘেরা পরিবেশ আর‌ও বিশেষ করে উত্তর দিকে গাছপালা লাগাতে হবে। 

ছাগল খামারে স্থান নির্বাচনে অবশ্যই অপেক্ষাকৃত উঁচু এবং উত্তম পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রতিটি পূর্ণ বয়স্ক ছাগলের জন্য গড়ে ৮-১০ বর্গ ফুট জায়গা প্রয়োজন। প্রতিটি বাড়ন-বাচ্চার জন্য গড়ে ৫ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন। ছাগলের ঘর ছন, গোল পাতা, খড়, টিন বা ইটের তৈরী হতে পারে। তবে যে ধরণের ঘরই হউক না কেন ঘরের ভিতর বাঁশ বা কাঠের মাচা তৈরী করে তার উপর ছাগল রাখতে হবে। মাচার উচ্চতা 

১.৫ মিটার (৫ ফুট) এবং মাচা থেকে ছাদের উচ্চতা ১.৮-২.৪ মিটার (৬-৮ ফুট) হবে। গোবর ও প্রগ্রাব পড়ার সুবিধার্থে বাঁশের চটা বা কাঠকে ১ সেঃ মিঃ (২.৫৪ ইঞ্চি) ফাঁকা রাখতে হবে। মাচার নিচ থেকে সহজে গোবর ও প্রগ্রাব সরানোর জন্য ঘরের মেঝে মাঝ বরাবর উঁচু করে দুই পার্শ্বে ঢালু (২%) রাখতে হবে। (রাম ছাগল পালন পদ্ধতি)

মেঝে মাটির হলে সেখানে পর্যাপ্ত বালি মাটি দিতে হবে। ছাগলের ঘরের দেয়াল, মাচার নিচের অংশ ফাঁকা এবং মাচার উপরের অংশ এম.এম. ফ্ল্যাক্সিবল নেট হতে পারে। বৃষ্টি যেন সরাসরি না ঢুকে সে জন্য ছাগলের ঘরের চালা ১-১.৫ মিঃ (৩.২৮-৩.৭৭ ফুট) ঝুলিয়ে দেয়া প্রয়োজন। শীতকালে রাতের বেলায় মাচার উপর দেয়ালকে চট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। শীতের সময় মাচার উপর ১০-১২ সেঃ মিঃ (৪-৫ ইঞ্চি) পুরু খড়ের বেডিং বিছিয়ে দিতে হবে। বিভিনড়ব বয়সের এবং বিভিনড়ব ধরণের ছাগলকে ভিনড়ব ভিনড়ব ঘরে রাখা উচিৎ। পাঁঠাকে সব সময় ছাগী থেকে পৃক করে রাখা উচিৎ। দুগ্ধবতী, গর্ভবতী ও শুষ্ক ছাগীকে একসাথে রাখা যেতে পারে। তবে তাদের পৃক খাওয়ানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে। শীতকালে বাচ্চাকে রাতের বেলা মায়ের সাথে ব্রম্নডিং পেনে রাখতে হবে। ব্রম্নডিং পেন একটি খাঁচা বিশেষ যা কাঠের বা বাঁশের তৈরী হতে পারে।আপনারা পড়ুন ছোটদের গরুর রচনা

 এর চারপার্শ্বে চটের ব্যবস্থা দিয়ে ঢাকা থাকে। খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ ছাগলের খাদ্য ব্যবস্থাপনাই খামারের অন্যতম প্রধান বিষয়। শাল দুধ বাচ্চার শরীরে এন্টিবডি তৈরী কওে রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে। দুই বা ততোধিক বাচ্চা হলে প্রত্যেকেই যেন শাল দুধ পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল ছানা সাধারণত ২-৩ মাসের মধ্যে দুধ ছাড়ে ইন্টেনসিভ এবং সেমি-ইন্টেনসিভ পদ্ধতিতে ছাগলের খাদ্যের পরিমাণ ও গুনগত মান নির্ভর করে চারণ ভূমিতে প্রাপ্ত ঘাসের পরিমাণ ও গুনগত মানের উপর। 

ছাগলের বাচ্চাকে কলষ্ট্রাম (শাল দুধ) খাওয়ানোঃ সাধারণত ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বাচ্চার ওজন ০.৮-১.৫ কেজি (গড়ে ১.০০ কেজি) ওজন হয়। বাচ্চা জন্মের পরপরই পরিস্কার করে আধা ঘন্টার মধ্যেই মায়ের শাল দুধ খেতে দিতে হবে। ছাগলের বাচ্চার প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম শাল দুধ খাওয়ানো প্রয়োজন। এই পরিমাণ দুধ দিনে ৮-১০ বারে খাওয়াতে হবে।। 

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের দুধ উৎপাদন কম হওয়ায় ২-৩ ছানা বিশিষ্ট মা ছাগীর দুধ কখনো কখনো বাচ্চার প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে পারেনা। এক্ষেত্রে ছানাকে পরিমাণমত ৩৭-৩৮ সেঃ তাপমাত্রায় অন্য ছাগলের দুধ বা মিল্ক রিপ্রেসার খাওয়ানো উচিত। ছাগলের বাচ্চার দানাদার খাদ্য মিশ্রণ কম আঁশ, উচ্চ প্রোটিন, উচ্চ বিপাকীয় শক্তি সম্পন্ন হতে হয়। ছাগলের বাচ্চাকে দানাদার খাদ্য খাওয়ানোঃ ছাগল ছানা প্রথমে মায়ের সাথেই দানাদার খাবার খেতে অভ্যস্থ হয়। বাড়ন্ত ছাগলের খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ ছাগলের ৩-১২ মাস সময়কালকে মূল বাড়ন্ত সময় বলা যায়। 


ছাগলের বাচচাকে জন্মের প্রথমে সপ্তাহ থেকে ঘাসের সাথে পরিচিত করে তুলতে হবে। সাধারণত শুরুতে মায়ের সাথেই বাচ্চা ঘাস খেতে শিখে। অভ্যস্থ করলে সাধারণত দুই সপ্তাহ থেকেই বাচচা অল্প অল্প ঘাস খায়। এ সময়ে বাচ্চাকে কচি ঘাস যেমন: দুর্বা, স্পেনডিডা, রোজী, পিকাটুলাম, সেন্টোসোমা, এন্ড্রোপোগন প্রভৃতি ঘাস খাওয়ানো যেতে পারে। তাছাড়া, ইপিল ইপিল, কাঁঠাল পাতা, ধইনচা ইত্যাদি পাতা খাওয়ানো যেতে পারে। এ সময়ে যেসব ছাগল প্রজনন বা মাংস উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হবে তাদের খাদ্য পুষ্টি চাহিদা যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে। দুধ ছাড়ানোর পর থেকে পাঁচ মাস পর্যন- সময়ে ছাগলের পুষ্টি সরবরাহ অত্যন্ত নাজুক পর্যায়ে থাকে। এ সময়ে একদিকে ছাগল দুধ থেকে প্রাপ্ত প্রোটিন ও বিপাকীয় শক্তি থেকে যেমন বঞ্চিত হয় তেমনি মাইক্রোবিয়াল ফার্মেন্টেশন থেকে প্রাপ্ত পুষ্টি সরবরাহও কম থাকে। এজন্য এ সময়ে পর্যাপ্ত প্রোটিন সমৃদ্ধ দানাদার ও আঁশ জাতীয় খাদ্য দিতে হবে।


রাম ছাগল চেনার উপায়


  • যমুনাপাড়ি বা রাম ছাগল  ছাগলের শরীরের রং  হলুদ,সাদা, কালো , বাদামী এবং বিভিন্ন রঙয়ের সংমিশ্রণে হয়ে থাকে।
  • রাম ছাগলের পা খুব লম্বা এবং পিছনের পায়ের পেছন দিকে লম্বা লোম থাকে যা রাম ছাগলের অন্যতম বৈশিষ্ট।
  • রাম ছাগলের শরীরের গঠন সাধারনত লম্বাটে হয়।
  • এদের কান লম্বা প্রকৃতির ও ঝুলন্ত হয়। 
  • একটি পূর্ণবয়স্ক যমুনাপাড়ী পাঁঠার ওজন ৬০-৯০ কেজি এবং ছাগীর ওজন ৪০-৬০ কেজি পর্যন্ত হতে থাকে।
  • এই প্রজাতির প্রাপ্তবয়স্ক ছাগলের গড় ওজন ৭০-৯০ কেজি এবং ছাগীর ওজন ৫০-৬০ কেজি পর্যন্ত হয়।
  • এরা অত্যান্ত কষ্টসহিষ্ণু ও চঞ্চল প্রকৃতির হয়ে থাকে।
  • এরা সাধারণত দেরিতে প্রাপ্ত বয়োস্ক হয়ে থাকে।
  • যমুনা পাড়ি জাতের ছাগী বছরে একবার বাচ্চা দেয় এবং প্রতিবার ১-২ টি বাচ্চা প্রসব করে।
  • যমুনাপাড়ি জাতের ছাগলের দুধ প্রদান ক্ষমতা দেশি জাতের ছাগলের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে। 
  • এরা প্রতিদিন প্রায় ১.৫-২ কেজির অধিক দুধ প্রদাণ করে। এ জাতের ছাগলের দুধে প্রায় ৪ – ৫ ভাগ ফ্যাট থাকে।
  • এ জাতের মাংশ ব্লাকবেঙ্গল জাতের ছাগলের মতো সুস্বাদু নয় এবং চামড়াও উন্নত মানের নয়। 
  • সাধারনত ৭-১০ ইঞ্চির অধিক ঝুলন্ত কান এদের প্রধান বৈশিষ্ট।
  • এ জাতের ছাগীর ওলান বেশ বড়, সুগঠিত ও ঝুলন্ত। ওলানের বাটগুলো মোটা ও লম্বা। মাথার শিং চ্যাপ্টা ও লম্বা হয়ে থাকে।
  • এদের শরীরের উচ্চতা ৩২-৪০ ইঞ্চি বা এর অধিক হতে পারে।
  • তবু দুধ ও মাংশ উৎপাদনের উদ্দেশ্যে এদেশে যমুনাপাড়ি জাতের ছাগল পালন করা হয়।
  • এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্লাকবেঙ্গল ছাগলের চেয়ে কম হয়ে থাকে।

রাম ছাগলের ছবি

রাম-ছাগল-পালনের-সহজ-পদ্ধতি-রাম ছাগল-রাম ছাগল-চেনার উপায়-রাম ছাগলের-বাচ্চার-দাম-কত,রাম ছাগল পালন পদ্ধতি,রাম ছাগল,রাম ছাগল চেনার উপায়, রাম ছাগলের বাচ্চার দাম কত
রাম ছাগল পালনের সহজ পদ্ধতি 




রাম ছাগলের বাচ্চার দাম কত


রামছাগল বাজামুনাপারি  জাতের ছাগলের  মাংস এবং  দুধ দুটিই ভাল দামে বিক্রি হয়। উন্নত জাতের ছাগল হওয়ায় ওজন অনেক বেশি হয় এবং বিক্রি করার সময় অনেক ভাল দাম পাওয়া যায়।

রাম ছাগলের বাচ্চার  ব্যাপক চাহিদা রয়েছে আমাদের দেশের বাজারে এবং ভালো দামেই বাচ্চা বিক্রয় হয়। একজন ছাগল পালন খামারি কম খরচে রাম ছাগল পালন করে খামারের উপার্জন অনেক সহজে বাড়াতে পারবেন। ছাগলকে দানাশস্যও কম দিতে হয়। রাম ছাগল গাছের পাতা খায়

আকারে বড় হওয়ায় বেশী পরিমাণ মাংস পাওয়া যায় এই প্রজাতির ছাগল থেকে।

রাম ছাগলের বাচ্চার দাম জানতে হলে আপনাকে বাজারে যেয়ে দেখতে হবে।




Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url