চোখের ঝাপসা দূর করার সহজ উপায় । চোখের সমস্যার সহজ সমাধান

 চোখের ঝাপসা দূর করার উপায়


চোখের ঝাপসা দূর করার উপায়,চোখ থেকে চশমা দূর করার উপায়,চোখের ব্যাথা দূর করার উপায়,চোখের ফ্লোটার্স দূর করার উপায়,চোখের ছানি দূর করার উপায়,সমস্যার




ইদানীং আপনি পত্রিকা পড়ার সময় অনেক অক্ষরগুলোকে কিছুটা ঝাপসা দেখছেন? আর দূরের সাইনবোর্ড এতই অস্পষ্ট যে আপনি কিছুই পড়তে পারছেন না? আপনি ভাবছেন যে, বয়স বাড়ছে—এমন তো হতেই পারে। কিন্তু অনেকেই জানেনা ঝাপসা দৃষ্টি কেবল বয়সেরই লক্ষণ নয়। এর সঙ্গে অন্যান্য শারীরিক সমস্যার সম্পর্ক থাকতে পারে। এ প্রসঙ্গে জেনে নিন কয়েকটি তথ্য:




—রেটিনার রক্তপ্রবাহ অনেক সময় বন্ধ হয়ে গেলে বা রেটিনা ডিটাচমেন্ট হয়ে গেলেও দৃষ্টিশক্তি আকস্মিক অনেক কমে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নইলে দৃষ্টি হারানোর আশঙ্কা থেকে যায়।


—একটু বেশি বয়সে দৃষ্টিসমস্যা হলে দেখতে হবে যে তার চোখে ছানি পড়েছে কি না। ডায়াবেটিস ও অন্যান্য কারণে তুলনামূলক কম বয়সেও অনেকের চোখে ছানি পড়তে পারে।


—অনেক কারণে দৃষ্টি সাময়িক ঝাপসা হয়ে যেতে পারে। যেমন: ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে শর্করা হঠাৎ কমে গেলে আবার মাইগ্রেনের সমস্যায় এবং কনজাংটিভাইটিসের মতো চোখের সংক্রমণ ইত্যাদি। সাধারণত এসব ক্ষেত্রে দৃষ্টি আবার ঠিক হয়ে যায়। মস্তিষ্কের জটিলতা থেকেও অনেক দেখতে সমস্যা হয়ে থাকে।


—উচ্চ রক্তচাপ কিংবা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকলে চোখের স্নায়ু,রেটিনা  ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এ সমস্যার নাম হলো রেটিনোপ্যাথি। এতে দৃষ্টিশক্তি অনেক সময় কমে যায়। তাই চোখে দেখতে সমস্যা হলে রক্তচাপ,রক্তে শর্করার মাত্রা ইত্যাদি মাপা উচিত।




—ছোট-বড় যেই হোক দৃষ্টিশক্তির সমস্যায় (রিফ্রেকটিভ এরর) সে আক্রান্ত হতে পারে। হ্রস্বদৃষ্টি বা দূরদৃষ্টির কোন সমস্যা চিকিৎসকের কাছে গেলে ধরা পড়ে এবং চশমা ব্যবহার করে সমাধান পাওয়া যায়। অনেকে ট্যারা চোখের কারণেও ঝাপসা দেখতে পারে। এরও অনেক চিকিৎসা আছে।



দৃষ্টিশক্তির পক্ষে সবচেয়ে বিপজ্জনক রোগগুলো নানা কারণে বা রিজনে হতে পারে। এক এক করে দেখে নেওয়া যাক সেই রোগগুলোর বৈশিষ্ট্য।



ডায়াবিটিসের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হলে শরীরের অনেক অঙ্গ এবং সিস্টেমের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। চোখের রেটিনার মাধ্যমে ভিসুয়াল ইনফর্মেশন অপটিক নার্ভে গিয়ে পৌঁছায়। রক্তে সুগারের মাত্তা বাড়লে রেটিনার সরু রক্তবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সরু রক্তজালক চিরে যায়। যেকারণে সেখান থেকে অনেক রক্ত এবং অন্যান্য তরল লিক করে। ফলে রেটিনার টিসু ফুলে ওঠে যেতে পারে। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। ডায়াবিটিসের অন্যতম ক্ষতিকর দিক হল রেটিনোপ্যাথি, যা থেকে অনেক সময় আপনার চোখে অন্ধত্ব চলে আসতে পারে। এই ক্ষতি শুরু হয় খুব সূক্ষ্ম ভাবে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ এটি বেড়েই চলে। দীর্ঘ দিন ডায়াবিটিসে ভুগলে এই রোগের আশঙ্কা অনেক বাড়ে। ক্ষতি যত তাড়াতাড়ি ধরা পড়বে তত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করতে হবে, দৃষ্টিশক্তি হারানোর আশঙ্কা তত কম।




এ রোগ প্রতিরোধের উপায় হল, ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণ করা, যাতে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে রেটিনোপ্যাথি হতে না পারে। সেই কারণে—




• নিয়ম করে ডায়াবিটিসের ওষুধপত্র খেতে ও ইনসুলিন নিতে হবে।


• বেশি করে স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া করতে হবে। রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়, এমন খাবার বাদ দিয়ে দিতে হবে একেবারেই।


• রোজ ক্ষমতা অনুযায়ী শারীরচর্চার অভ্যাস করে তুলতে হবে।


• নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে কোলেস্টেরলের মাত্রা এবং উচ্চ রক্তচাপও  ।


•  ধূমপান এবং মদ্যপান ইত্যাদি অতি তাড়াতাড়ি ছাড়তে হবে

Get code of Glowing Neon Button 

খাদ্যতালিকায় যেন যথেষ্ট পরিমাণে আনাজপাতি  এবং টাটকা ফলমূল  থাকে। খাওয়া দাওয়ার উপর চোখের স্বাস্থ্য গভীর ভাবে নির্ভরশীল। সেপ্টেম্বর ২০১৯-এর ঘটনা। ব্রিটেনে এক কিশোরের আকস্মিক অন্ধত্ব দেখা দেয়। গবেষণায় জানা যায় যে, ছেলেটি গত কয়েক বছর ধরে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই,পটেটো চিপ্‌স  এবং প্রসেসড পর্ক প্রডাক্ট ছাড়া আর কিছুই খায়নি। এই ধরনের ঘটনা অপটিক নিউরোপ্যাথির একটি চূড়ান্ত উদাহরণ। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস চোখের সুস্থতার জন্যও অনেক অপরিহার্য।


এই রোগের চিকিৎসায় চোখে সরাসরি ইঞ্জেকশন দিয়ে রক্তজালিকার ক্ষতি আটকানো যায়, প্রদাহও থামানো যায়। রক্তজালিকার কোনও অংশ চিরে বা ফেটে গেলে, লেসার থেরাপির মাধ্যমে তা মেরামত করাও সম্ভব। ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির খুব অ্যাডভান্সড পর্যায়ে সার্জারি আবশ্যক হয়ে যায়। সার্জারির মাধ্যমে চোখের পিছন থেকে আপনার ভিট্রিয়াস হিউমরকে প্রতিস্থাপন এবং ডিটাচ হয়ে যাওয়া রেটিনাকে পুনর্স্থাপন করা হয়ে থাকে।


গ্লকোমা


রোগীর অজান্তেই তার চোখের দৃষ্টির বিস্তৃতি পরিধি থেকে ক্ষয় হতে হতে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ে। রোগী হয়তো অনেক দূর অবধি স্পষ্ট দেখছেন, কিন্তু সেটা একটা গোলাকার নলের মধ্য দিয়ে দেখার মতো। আশপাশের জিনিস দেখতে পাওয়া যায় না। গাড়ি চালাতে অসুবিধে হয়। লক্ষণ টের পাওয়া যায় না, তাই ধরা পড়তেও দেরি হয়ে যায় অনেক সময়।


রোগের কারণ, অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া যা খুবেই...। ক্ষতি হওয়ার কারণ চোখের ভিতরকার ইন্ট্রাঅকিউলার প্রেশার। অক্ষিগোলকের ভিতরে যে তরল থাকে, তার নাম অ্যাকুয়াস হিউমর। এর চাপ নির্দিষ্ট মাত্রা পেরোলে অপটিক নার্ভে চাপ পড়ে দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি অনেক বেড়ে যায়।

Get code of Glowing Neon Button 

বিশিষ্ট চক্ষুবিশেষজ্ঞ ডা. সুমিত চৌধুরী বলেন, “যখন রোগী টের পান, তখন ক্ষতি অনেকখানি হয়ে গিয়েছে already । দৃষ্টিশক্তি কমে যায়, রোগী চোখে ঝাপসা দেখেন, তখন বুঝতে হবে কেন্দ্রীয় দৃষ্টিশক্তিরও ক্ষতি হতে শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ কোনও গ্লকোমার ক্ষেত্রে চোখের দৃষ্টি খুব ঝাপসা হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখে ব্যথা করা বা লাল হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়। চশমার কাছের পাওয়ার খুব কম সময়ের ব্যবধানে বারবার বদলে যাওয়াও গ্লকোমার লক্ষণ হতে পারে। অনেক সময়ে দেখা গিয়েছে, যাঁদের চোখে বেশি মাইনাস পাওয়ার, টাইপ টু ডায়াবিটিস আছে, চোখে কোনও চোট বা আঘাত লাগার মতো ঘটনা রয়েছে, থাইরয়েড, মাইগ্রেন, পরিবারে কারও গ্লকোমা ধরা পড়েছে, দেহের ওজন খুব বেশি, বহু দিন ধরে স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ খেতে হলেও এই রোগের আশঙ্কা বেশি।”


রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি সম্পর্কে ডা. চৌধুরী বললেন, “প্রথমে রোগীর চোখের প্রেশার বা আইওপি চেক করা হয়। আইওপি দেখার পর গোনিওস্কোপির মাধ্যমে চোখের ভিতরের কোণ বা অ্যাঙ্গল অফ অ্যান্টেরিয়র চেম্বার পরীক্ষা করা হয়। এর মাধ্যমে গ্লকোমাকে ওপেন অ্যাঙ্গল বা ক্লোজড অ্যাঙ্গল গ্লকোমাতে ভাগ করা হয়। ওপেন অ্যাঙ্গল হলে বুঝতে হবে চোখের ভিতরে অ্যাকুয়াস হিউমরের চাপ বেড়েছে, কিন্তু তরল বেরোনোর পথ খোলা আছে। ক্লোজ়ড অ্যাঙ্গলের ক্ষেত্রে এই পথটি বন্ধ হয়ে যায়। চোখে অনেক সময়ে ব্যথা হয়, লাল হয় ও ঘন ঘন চালশের ফলে চশমার পাওয়ার বদলাতে হয়।”


অ্যাঙ্গল দেখার পরে চোখের নার্ভের কতটা ক্ষতি হয়েছে, সেটা দেখা হয়। অটোমেটেড পেরিমেট্রিতে চোখের কতটা দৃষ্টিক্ষেত্র নষ্ট হয়েছে, তা ধরতে পারা যায়। কখনও পেরিমেট্রিতে ধরা না পড়লে বা নিশ্চয়তার জন্য ওসিটি বা অপটিকাল কোহেরেন্স টোনোগ্রাফি পরীক্ষা করা হয়। অনেক সময়ে কিন্তু আইওপি বা ইন্ট্রাঅকিউলার প্রেশার স্বাভাবিক বা কম থাকা সত্ত্বেও অপটিক নার্ভের ক্ষতি হতে পারে। এ সব ক্ষেত্রে অটোমেটেড পেরিমেট্রি বা ওসিটি না করলে রোগ শনাক্ত করা যায় না।


ডা. চৌধুরী বললেন, “রোগটি যত আগে ধরা পড়ে, তত দ্রুত ক্ষতি আটকানো সম্ভব। যতটুকু দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়েছে, তা আর ফেরত আসে না, কিন্তু অবশিষ্ট দৃষ্টিশক্তি সুরক্ষিত রাখা যেতে পারে। এই পদ্ধতিতে চিকিৎসক কিন্তু শুধু প্রেসক্রিপশনই দেন, বাকিটা নির্ভর করছে রোগী ও তাঁর পরিবারের সতর্কতার উপরে। নিয়ম মেনে ওষুধ প্রয়োগ করে চলার সঙ্গে-সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে চোখ পরীক্ষা করিয়ে যেতে হবে। তবেই প্রতিরোধ করা সম্ভব গ্লকোমা জনিত দৃষ্টিহীনতা।”


ক্যাটারাক্ট বা ছানি


চোখের নিজস্ব স্বাভাবিক লেন্সের স্বচ্ছতা কমে আসাই হলোই ছানি। এতে লেন্সের উপরে প্রোটিন জমে যেয়ে ক্লাউডিং বা ঝাপসা ভাব তৈরি হয়। ফলে আলোকরশ্মি সরাসরি রেটিনায় গিয়ে পড়তে পারে না। এটা খুব সাধারণ এবং প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই হয়। বেশি বয়সে প্রায় সব মানুষেরই এমন রোগ হয়। অন্তত গড়ে প্রায় ৬৫-৭০ বছর বয়সের পর একটি বা দু’টি চোখেই এই রোগ দেখা দেওয়া অনেক স্বাভাবিক। কিন্তু অতি বিরল হলেও শিশুবয়সেও এই রোগ হতে পারে। যেহেতু রোগটি খুবই স্বাভাবিক এবং সকলেরই প্রায়  হয়, সেই কারণে চিকিৎসা না করালে এটিকেই কিন্তু  অন্ধত্বের সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে।


এই রোগের লক্ষণগুলো হল, দৃষ্টিশক্তি ক্রমশ কমে আসা, ঝাপসা বা কুয়াশাচ্ছন্ন দৃষ্টি,ঠিক চশমা পরেও ভিশনের সমস্যা,  কখনও কখনও একটা জিনিসকে দুটো দেখা, ঠিক রং চিনতে অসুবিধে হওয়া ও সন্ধের পর চোখের ঝাপসা ভাব বেড়ে যাওয়া।


Get code of Glowing Neon Button 


এই সমস্যার লক্ষণগুলো হল, জিনিসপত্র স্পষ্ট দেখায় অসুবিধে হয়ে যায়, জিনিসপত্রের আকার আয়তন ডিসটর্টেড বা বিকৃত হতে দেখায়, সোজা দাগ ঢেউখেলানো দেখায়, রং স্পষ্ট বোঝা যায় না, দৃষ্টির কেন্দ্রীয় অংশে অন্ধকার বা ফাঁকা দেখায়। এগুলোর মধ্যে কোনও একটা হলেই চক্ষুচিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। উপযুক্ত চিকিৎসায় ক্ষতিবৃদ্ধি আটকানো সম্ভব।


চোখের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে এ ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া এবং ধূমপানের অভ্যেস ত্রাগ করতে হবে, তা বন্ধ করা অতি অবশ্যই প্রয়োজন। ঠিক ভিটামিনসমৃদ্ধ ডায়েট দৃষ্টিশক্তি হারানোর প্রক্রিয়াকে অনেকটা অংশেয় আটকে দিতে সক্ষম হয় এটি।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url